Shopping Cart

Call us  : +880 1911-303620

FREE SHIPPING ALL BD ONLY*

জামদানি কথন

জামদানি আমাদের গর্ব, আমাদের শত বছর পুরানো ঐতিহ্য। কিন্তু এই গর্বের এবং এর সাথে ঐতিহ্য হওয়া সত্ত্বেও কেন দিন দিন জামদানি শাড়ি পিছিয়ে পরছে , সবাইকে এখন পরতে দেখা যায় না কেন? এতো এতো ইন্ডিয়ান এবং পাকিস্তানি ড্রেস, শাড়ির মাঝে কেন জামদানি খুজে পাওয়া কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে?

 

এই জামদানি শাড়ি ছিলো যেখানে আভিজাত্যের প্রতীক সেখানে এখন কেন দেখা যাচ্ছে না? আগে যেখানে মুঘল রাজ-বাদশাহ দের পছন্দের তালিকায় ছিলো এই কাপড় সেখানে কেন এখন খুব একটা নেই?

 

শুধু কি আমাদের দেশের রাজা- বাদশাদের পছন্দের শীর্ষে ছিলো ? না সারা পৃথীবীর বিখ্যাত মানুষ জন যারাই এই কাপড় এর ব্যাপারে জেনেছে তারাই একে নিজের করে নিতে চেয়েছে। সারা পৃথিবী জুড়েই যার এতো খ্যাতি কিন্তু যে দেশের পণ্য সে দেশেই কেন এতো অবহেলা?

 

এতো এতো প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়েই প্রায় ৮ বছর আগে জামদানি মেলার শুরু। 

 

আমি যেহেতু  নারায়ণগঞ্জ এর ছেলে এবং এই জামদানির গোড়াপত্তন নারায়ণগঞ্জে। এবং এই জামদানি বাংলার ঐতিহ্য। ছোট বেলা থেকেই জামদানির ব্যাপার এ দেখে এবং শুনে আসছি এবং জামদানি নিয়ে কিছু করার ইচ্ছা অনেক আগ থেকেই মনে বাসা বেধে ছিলো। 

 

মসলিন কাপড় এর উত্তরসূরি সচ্ছে জামদানি কাপড়। এই মসলিন কাপড় এর জন্য বিশেষ এক প্রকার তুলার প্রয়োজন হতো। সেটি ছিলো কার্পাস নামক এক তুলা। এই বিশেষ তুলার থেকে সুতা উৎপাদন করে সেই সুতায় বোনা হতো মসলিন কাপড়।

 

কালের বিবর্তনে মসলিন সুতা হারিয়ে গেলেও তার উত্তরসূরি হিসেবে টিকে আছে জামদানি আমাদের মাঝে আজও। আর এই জামদনি কাপড় নিয়েই আজকের যত কথা।

 

একটি জামদানি শাড়ি তৈরীতে ২জন তাঁতির ৭ দিন থেকে ১মাস সাধারণত সময় লেগে থাকে। শাড়ি ভেদে সেটি ৬/৮ মাস সময় ও লেগে যেতে পারে। 

সুতার দাম – ৭/৮ বছর আগেও রেশমি সুতার দাম ছিল ৮-১০ টাকা এখন দাম ৯০-১২০ টাকা। তাঁতিদের পেশার পরিবর্তনের কারনে এখন তাঁতিদের ৩০ হাজার থেকে ৬০ হাজার টাকা অগ্রিম দিতে হয় শাড়ি বোনার জন্য। ২জন তাঁতির ৭ দিনের মজুরি,অগ্রিম টাকা এবং সুতার দাম দিয়ে কিভাবে একটি শাড়ির মূল্য স্বাভাবিকভাবেই বেড়ে যায়।

 

জামদানি শাড়ি মূলত দুই ধরনের। হাফসিল্ক এবং সুতি। তবে আগে পুরো সিল্ক এর জামদানি শাড়িও বোনা হতো খরচ অনেক বেশি হওয়াতে এখন আর পুরো সিল্ক এর জামদানি খুব কম বোনা হয়। এছাড়াও মেশিন এটি মিক্স সুতায় এবং নাইলন নামে অন্য আরেক প্রকার জামদানি শাড়ি পাওয়া যায়। 


শাড়ির দাম কিসের উপর নির্ভর করে?

  • জামদানি শাড়ি হাফ সিল্ক না সূতী না নাইলন সুতায় তৈরি তার উপর দাম নির্ভর করবে।

  • রেশমি সুতার কোয়ালিটির উপর দাম নির্ভর করবে।

  • শাড়ির কাজ হালকা না ভারী তার উপর নির্ভর করবে।

  • পুরো জমিনে কাজ না শুধু সামনের দিকে কাজ তার উপর দাম নির্ভর করবে।

  • শাড়ির সুতার কালার এর উপর দাম নির্ভর করবে।

  • জড়ি না সুতার কাজ তার উপর দাম নির্ভর করবে।

এতো এতো কারণ এর কারনে জামদানি শাড়ির দাম তো বেশি থাকাই স্বাভাবিক। কিন্তু তাহলে তাতিরা কেন এই পেশা ছেড়ে দিচ্ছেন?

এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে শুরু করি আমরা আবার নতুন করে। আমরা নিজেরা তাতি বাড়ি নিজেরা যাওয়া শুরু করি। নোয়াপাড়া, রুপসী, কাজীপাড়া, গন্ধবপুর, মৈকুলি, গংগানগর, বরাব, মোগরাকুল, পবনকুল এবং পার্শ্ববর্তী সোনারগাঁও ও সিদ্ধিরগঞ্জ এই এলাকার তাতিদের সাথে কথা বলি। 

কথা বলে জানতে পারলাম যে এই তাতি থেকে কাষ্টমার পর্যন্ত শাড়িগুলো পৌছাতে অনেকগুলো হাত বদল হয়ে থাকে। প্রতি হাতে ২০০ টাকা প্রফিট থাকলেও শাড়ির দাম ১০০০/২০০০ টাকা বেড়ে যায়। এর উপরে আছেন মহাজনেরা। যাদের কাছে টাকা আছে কারি কারি। তাতিরা কম উপার্জনের মানুষ, তাদের চাহিদা পূরনের জন্য তারা মহাজনের নিকট শাড়ি বিক্রি করতে হয় কম দামে। কিন্তু মহাজনেরা এই জামদানি শাড়ির মূল্য জানেন। তারা নিজেরা এই শাড়ি কিনে মার্কেট গুলোতে ২০০০ থেকে ২০,০০০ টাকা প্রফিট রেখে বিক্রি করেন।

এতো এতো গ্যাপ দেখে সিদ্ধান্ত নিলাম যে আমি নিজ থেকে চেষ্টা করি যদি ১০ জন তাতির ভাগ্য ফেরানো যায় খারাপ কি? সেই থেকেই ৮ বছর আগে জামদানি মেলার শুরু।

আমরা সরাসরি তাতি থেকে ন্যায্য মূল্যে শাড়ি বুনিয়ে আনি। মাঝে কোনো মিডলম্যান নেই তাই ক্রেতা নিজেও সঠিক দামে অরিজিনাল জামদানি কাপড় পাচ্ছেন আমাদের থেকে। 

আমরা ক্রেতার পছন্দমতো কালার এবং কাষ্টমাইজ নকশা দিয়ে শাড়ি বুনে দিচ্ছি প্রথম থেকেই। আর তাই শুধু দেশেই না দেশের বাহিরের বিভিন্ন দেশ থেকে শাড়ির অর্ডার নিয়ে রেমিট্যান্স আনছি ক্ষুদ্র পরিসরে হলেও।  

দেশের বাহিরের কাষ্টমারের জন্য আমরা টেইলারিং সার্ভিস টাও দিচ্ছি শুধুমাত্র তাদের কষ্ট লাঘব এর জন্য। কারন আমরা জানি যে দেশের বাহিরে টেইলারিং খরচ এবং দর্জি খুজে পাওয়া কতটা কষ্টের। 

আমরা এখনো পুরোপুরি অনলাইন নির্ভর ব্যবসা করছি। ফেসবুক পেজ, ইন্সটাগ্রাম এবং ওয়েবসাইট এর মাধ্যমেই সকল কাজ পরিচালিত হচ্ছে। খুব শীঘ্রই আমরা আমাদের অফলাইন ষ্টোর করার চিন্তা করছি।

এখন আমাদের সাথে আছে রেগুলার কাজ করার জন্য ২০ জন তাতি। আর ফ্রি ল্যান্সার তাতি হিসেবে আছেন আরো ১০/১২ জন। যাদের অর্ডার এর পরিমান অনুসারে চুক্তি ভিত্তিক কাজ করানো হয়। 

দেশের বাহিরের হোলসেল নিচ্ছেন ৩ জন। কথা চলছে আরো বেশকিছু ক্লায়েন্ট এর সাথে। দেশের সাথে সাথে আবারো জামদানি পৃথিবী জুড়েই আবারো জনপ্রিয় হবে রাজকীয় আইটেম হিসেবে এই আশাই ব্যক্ত করছি।

আশার কথা মসলিন এর পুনর্জন্ম হচ্ছে। সরকারী সহায়তায় ৭৫০ কাউন্ট এর সুতা দিয়ে মসলিন কাপড় বানানো হয়েছে। খুব শীঘ্রই বাণিজ্যিক ভাবে বিক্রয় শুরু হবে আশা প্রকাশ করেছেন সরকারি তাত বোর্ড। বানিজ্যিকভাবে শুরু হলে আমরাও মসলিন বিক্রি করতে পারবো বলে আশাবাদী। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

× Need anyone to talk?