জামদানি কথন
যদিও আমার লেখালখির অভ্যাস নেই তারপর ও আজ কিছু লেখার একান্ত প্রয়োজন অনুভব করছি।
আমি নারায়ণগঞ্জ এর ছেলে এবং এই জামদানির গোড়াপত্তন নারায়ণগঞ্জে। এবং এই জামদানি বাংলার ঐতিহ্য। ছোট বেলা থেকেই জামদানির ব্যাপার এ দেখে এবং শুনে আসছি।এবং জামদানি নিয়ে কিছু করার ইচ্ছা অনেক আগ থেকেই
আগেই যখন বলেছি জামদানি কথন তাই জামদানি নিয়েই আজ কিছু বলার চেষ্টা করব।ব্যবসা অথবা ভোক্তা হিসেবে যাতে যাচাই বাছাই করে ভাল জামদানি কিনতে পারেন এই উদ্দেশ্য নিয়ে আজ লেখা।
যেহেতু আমি জামদানির আশে পাশে বড় হয়েছি তাই জামদানি সম্পর্কে আমার ধারনা সাধারন ভোক্তা থেকে কিছু বেশীই।
অনেকের কাছ থেকে অনেক ধরনের প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয় আজ তার উত্তরগুলো দেয়ার চেষ্টা করব।
১. জামদানি শাড়ি এত দাম কেন হয়?
উত্তর ঃ একটি জামদানি শাড়ি তৈরীতে ২জন তাঁতির ৭ দিন থেকে ১মাস সাধারণত সময় লেগে থাকে।সুতার দাম – আগে রেশমি সুতার দাম ছিল ৮-১০ টাকা এখন দাম ৭০-৯০ টাকা। তাঁতিদের পেশার পরিবর্তনের কারনে এখন তাঁতিদের ৩০ হাজার থেকে ৬০ হাজার টাকা অগ্রিম দিতে হয় শাড়ি বোনার জন্য। ২জন তাঁতির ৭ দিনের মজুরি,অগ্রিম টাকা এবং সুতার দাম দিয়ে কিভাবে একটি শাড়ির মূল্য এত কম হয় আজ এ প্রশ্ন আমার ভোক্তাদের কাছে।
২. কত রকমের জামদানি হয়ে থাকে?
আসলে জামদানি যে কত রকমের হয়ে থাকে তা আমি নিজেও এখন পর্যন্ত শিখতে পারি নি।তবে মূলত জামদানিকে ২ ভাগে ভাগ করা যায় –
- হাফ সিল্ক
- সুতি (কটন)
৩. কোন শাড়িটি ভাল?
আপনি হাফ সিল্ক অথবা সূতী যেটাই বলুন না কেন ২টি শাড়িই ভাল। হাফ সিল্ক শাড়ি ওজনে হালকা এবং সূতী শাড়ি তুলনামুলকভাবে একটু ভারী হবে।
৪. শাড়ি শক্ত নরম হয় কেন?
জামদানি তৈরিতে ভাতের মার অথবা সাগুর মার ব্যবহার করে তৈরি করা হয়ে থাকে।মার ব্যবহারের ফলেই শাড়ি শক্ত নরম হয়ে থাকে।
হাফ সিল্ক শাড়ি তৈরিতে মার বেশী ব্যবহার করতে হয় কারন রেশমি সুতার তৈরি। আর সূতী শাড়িতে মার দিলেও কম শক্ত হয়ে থাকে। সাধারনত সূতী এবং নাইলন শাড়ি হাফ সিল্ক শাড়ি থেকে তুলনামুল্কভাবে নরম হবে।
এছাড়াও মেশিনে তৈরি শাড়ি এবং দোকানের অনেক দিনের অবিক্রিত শাড়ি গুলোও নরম হয়ে থাকে। যদিও শাড়ি প্রতি ২০০-৩০০ টাকায় আবারও নতুন মার দেয়া যায় যাকে কাটা করানো বলা হয়।
শাড়ি নরম হলে আপনি কতদিন ব্যবহার করতে পারবেন সেটা আপনাদের উপর এ ছেড়ে দিলাম।
৫. শাড়ির দাম কিসের উপর নির্ভর করে?
- জামদানি শাড়ি হাফ সিল্ক না সূতী না নাইলন সুতায় তৈরি তার উপর দাম নির্ভর করবে।
- রেশমি সুতার কোয়ালিটির উপর দাম নির্ভর করবে।
- শাড়ির কাজ হালকা না ভারী তার উপর নির্ভর করবে।
- পুরো জমিনে কাজ না শুধু সামনের দিকে কাজ তার উপর দাম নির্ভর করবে।
- শাড়ির সুতার কালার এর উপর দাম নির্ভর করবে।
- জড়ি না সুতার কাজ তার উপর দাম নির্ভর করবে।
৬. কোন জায়গা থেকে শাড়ি নিয়ে আসেন?
ঢাকার পাশেই ডেমরা এলাকার আশে পাশেই জামদানি শাড়ি তৈরি হয়। সাধারণত নোয়াপাড়া, রুপসী, কাজীপাড়া, গন্ধবপুর, মৈকুলি, গংগানগর, বরাব, মোগরাকুল, পবনকুল এবং পার্শ্ববর্তী সোনারগাঁও ও সিদ্ধিরগঞ্জে অল্প বিস্তর এ শিল্প রয়েছে।
৭. শাড়ির দাম বেশী কিন্তু তাঁতিরা পেশা পরিবর্তন করছেন কেন?
আসলে এখন তাঁতিরা সরাসরি শাড়ি বিক্রি করেন কম। মহাজন এর অধিনস্ত হয়ে মজুরির বিনিময়ে কাজ করেন। আর মহাজনরা প্রাপ্য মজুরি দেন না তাঁতিদের তাই পেশা পরিবর্তন করতে বাধ্য হচ্ছেন। কিন্তু মহাজনেরা ঠিকই ৫তলা দালান করেছেন। মহাজনরা তাঁতিদের কাছ থেকে ঘুরে ঘুরে এবং হাট থেকে শাড়ি কিনে ঢাকাসহ সারা দেশে জামদানি সাপ্লাই করে থাকেন তাই দামটিও বেড়ে যায়।যারা কেবল তাঁতিদের নিকট থেকে শাড়ি কিনেন তারাই তুলনামুলকভাবে কম দামে শাড়ি দিতে পারবেন।
আমি নিজে আমার জামদানি মেলার জন্য তাঁতিদের বাড়ি বাড়ি ঘুরে শাড়ি কিনে থাকি।
৮. দোকান না অনলাইন কোথায় দাম কম?
অনলাইনে যে ব্যবসা করছেন তার খরচ বলতে শুধু পরিবহন খরচ। আর যে দোকান নিয়ে বসেছেন তার পরিবহন খরচের সাথে দোকান ভাড়া, কর্মচারীর বেতন ইত্যাদি বিষয় জড়িত। আপনারাই ভাল বুঝবেন আশা করছি কোন ব্যবসায়ীর দাম কম হবে।
৯. অনলাইন ব্যবসায়ীর শাড়ি হাতে ধরে দেখতে পারি না বিশ্বাস করি কিভাবে?
আমি নিজেও একমত। অনলাইন ষ্টোর হতে শাড়ি কেনার ক্ষেত্রে শাড়ির কোয়ালিটি শুধুমাত্র ছবি দেখেই বুঝতে হয়। আমার মত অনেকের ই দামি ক্যামেরা নেই তাই ভালভাবে ছবিতে বুঝানো যায় না। এক্ষেত্রে ভোক্তা অনলাইন ষ্টোর এর পেজ অথবা ওয়েব সাইট থাকলে দেখে আন্দাজ করতে পারেন তার ব্যবসায়িক অবস্থা।
আর শাড়ি ক্যাশ অন ডেলিভারি নিতে পারলে ভাল যদি সামনাসামনি পছন্দ না হয় অথবা ছবির মত না হয় তখন রিটার্ন করতে পারবেন।
এই প্রথম লেখায় জানি না কতদূর কি আপনাদের জামদানি কেনার ক্ষেত্রে সাহাযা করতে পারবে। তবুও কিছু লেখার প্রয়োজন অনুভব করায় লিখলাম। ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।
এত সময় নিয়ে পরার জন্য ধন্যবাদ।